প্রাথমিক শিক্ষকরা বাইক চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন

মোখলেছুর রহমান মানিক বাইক চালিয়ে নিজের সংসার চালান। তবে তাঁর আসল পরিচয়, একজন জাতি গড়ার কারিগর। শিক্ষকতা করেন একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শুধু তিনিই নন তার মত এমন অনেক শিক্ষকই আছেন যারা শিক্ষকতার পাশাপাশি বাইক-ইজিবাইক চালিয়ে নিজের সংসারের খরচ চালিয়ে নিচ্ছেন। আবার অনেকে করছেন কৃষিকাজ।

২০০৮ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কেন্দুয়াপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। শুরু থেকেই এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন তিনি। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ভেবেছিলেন কষ্টের দিন বুঝি শেষ হয়ে আসছে। কারণ সে সময় জাতীয়করণের যে সকল শর্ত ছিল তার সবটাই পূরণ ছিল বিদ্যালয়টির। কিন্তু সে দফায় বাদ পড়ে যায় স্কুলটি। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি বাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের এ পথ বেছে নেন তিনি।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ৪৭ দিন ধরে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাথে কথা বলতে গেলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এভাবেই জানালেন তার জীবনের কথা।

জাতীয়করণ হতে বাদ পড়া বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা এভাবেই পার করছেন জীবনের কঠিন সময়। তাদের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। জীবন হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। অন্য কোন পেশায়ও যেতে পারছেন না চাকরির আবেদনের বয়স পার হওয়ায়।

খাগড়াছড়ি জেলার লেমুছড়ি শান্তিপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, জাতীয়করণের শর্ত পূরণ থাকলেও আমাদের বিদ্যালয়টি বাদ পড়ে যায়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত শ্রম দিলেও আমরা তার বিনিময় পাচ্ছি না। সে জন্য আজ আমাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের এভারগ্রীণ পাররাম কৃষ্ণপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। ২০০৫ সালে স্কুলটি স্থাপিত হয়। ২০১৩ সালে জাতীয়করণের ঘোষণা অনুযায়ী, স্কুলটির শর্ত পূরণ থাকলেও অজানা কারণে বাদ পড়ে যায় তালিকা থেকে। তাই বাধ্য হয়ে জীবন ধারণের জন্য স্কুল শুরুর আগে ও ছুটির পর কৃষিকাজ করতে হয়। স্ত্রী-সন্তানদের চাহিদা ঠিকভাবে মেটাতে পারেন না। তাদের আবদারগুলো সান্ত্বনা দিয়ে মেটাতে হয় আমাকে।

২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী যে সকল বিদ্যালয় ২৭মে ২০১২ এর পূর্বে বিদ্যালয়ের নামে জমি দলিল ও পাঠদানের জন্য অনুমতির জন্য আবেদন করেছে তাদেরকে জাতীয়করণের আওতায় আনা হবে। তবে তৎকালীন কিছু কর্মকর্তার অবহেলার জন্য শর্ত পূরণকৃত ৪১৫৯টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ হতে বাদ পড়ে যায়। তারা বলছেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই এ সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তাই আন্দোলনকারী শিক্ষকরা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।