প্রাথমিকে দুর্বল শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে পড়ানোর উদ্যোগ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের বিশেষ যত্ন নেওয়া হবে। পড়া ঠিকমতো বুঝতে না পারা, আত্মস্থ করতে না পারা ছাত্রছাত্রীদের আলাদা করে তাদের জন্য বিশেষভাবে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। তাদের ভাষাজ্ঞান বাড়াতে ও শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতেও নেওয়া হবে বিশেষ উদ্যোগ। শিশুদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হবে বিদ্যালয়ে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সন্তানরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সন্তানরাও এখানেই পড়ে। তাদের যথাযথভাবে গড়ে তোলা না গেলে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে। এখন আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি মানসম্মত শিক্ষায়। সে কারণেই এসব বিশেষ উদ্যোগ।
এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে শিক্ষকরা প্রতি শ্রেণিতে দুর্বল শিক্ষার্থীদের আলাদা করে তাদের তালিকা তৈরি করবেন। তাদের বিশেষ করে ইংরেজি ও গণিত সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে বোঝানো হবে। গত বছর ইউনেস্কোর অভিযোগ ছিল, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা বাংলা ও ইংরেজি পড়তেই পারে না। সে কারণে এবার বিদ্যালয়ের যেসব শিশু ইংরেজি পঠনে অদক্ষ, তাদের বাড়তি মনোযোগ দিয়ে পাঠদানের নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী বছর মুজিববর্ষ উদযাপনকালে সরকারি প্রাথমিকের শতভাগ যেন শিশু পঠন দক্ষতা অর্জন করতে পারে, সে টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে মন্ত্রণালয়। সচিব আকরাম আল হোসেন সমকালের কাছে দাবি করেন, ৬৫ শতাংশ শিশু এখন দক্ষতার সঙ্গে পড়তে পারে। যদিও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনে এখনও উঠে আসছে, বাংলাদেশের শিশুরা ক্লাসের পাঠ গ্রহণে পিছিয়ে আছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোন ক্লাসে কতজন শিশু দুর্বল, থানা থেকে জেলা এবং বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে তাদের তালিকার প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। কোনো শিশুকেই শিক্ষকের মনোযোগের বাইরে রাখা যাবে না। শতভাগ কার্যকর ক্লাসের পাঠদান করতে হবে।
সচিব মো. আকরাম আল হোসেন সমকালকে বলেন, ইউনেস্কোর রিপোর্ট ছিল যে, বাংলাদেশের তৃতীয় শ্রেণির ৬৫ শতাংশ শিশু রিডিং পারে না। এখন খুব কম ছাত্রছাত্রী রয়েছে, যারা রিডিং পারে না। মুজিববর্ষে (২০২০ সাল) শতভাগ শিক্ষার্থী রিডিং পারবে, এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। এখন আমরা প্রত্যেক স্কুলে দুর্বল শিশুদের চিহ্নিত করে তাদের ওপর জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছি। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে প্রকাশিত ইউনেস্কোর সর্বশেষ প্রতিবেদন `লার্নিং টু রিয়ালাইজ এডুকেশনস প্রমিজ ২০১৮`-তে বলা হয়েছে, পঞ্চম শ্রেণির ১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে নিজ পাঠ্যপুস্তকের সাধারণ গণিত সমাধান করতে দিলে প্রতি চারজনে একজন শিক্ষার্থী তা করতে পারে। ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই পাঠ্যবইয়ের গণিত পারে না বা বোঝে না। অপরদিকে, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ বাংলা রিডিং পারে। বাকি ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা রিডিং পারে না। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সব শিক্ষার্থী স্কুলে যাচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। কিন্তু ক্লাসে যা শেখানো হচ্ছে তা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকছে। মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এসব শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয়ে বাড়ছে সুযোগ-সুবিধা :আগামী বছর থেকে সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, এর বাইরে বছরের শুরুতে বিনামূল্যের বই দেওয়ার সময় শিশুদের পোশাক কেনার জন্য এককালীন দুই হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। স্কুলের পোশাক বানাতে না পারায় লজ্জায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেক শিশু বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। তাদের জন্য এ ব্যবস্থা।
সরকার বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মোট নয় ধরনের সুযোগ- সুবিধা দিয়ে থাকে। প্রতিবছর প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য কন্টিনজেনসি হিসেবে কমপক্ষে মাসে ৫০০ টাকা, (যে স্কুলের শিক্ষক সাতজন সে স্কুলের জন্য ৭০০ টাকা), প্রাক-প্রাথমিক স্তরের জন্য ১০ হাজার, স্লিপের বরাদ্দ ৪০ থেকে ৭০ হাজার, আন্তঃক্রীড়ার জন্য দুই হাজার এবং বই বিতরণে ৪০০ টাকা দেওয়া হয়। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সারাদেশের পাঁচ হাজার ৬০৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত-সংস্কার ও অন্যান্য কাজ সম্পাদনের জন্য দেড় লাখ টাকা করে বরাদ্দ ও মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিত্যনৈমিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ বিদ্যালয়প্রতি বরাদ্দ ৪০ হাজার টাকা এবং ওয়াশরুমের পরিচ্ছন্নতার জন্য ২০ হাজার