মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রাথমিকের বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন চালুর প্রকল্প

শিক্ষক ও কর্মচারীদের যথসময় স্কুলে উপস্থিত হওয়া এবং স্কুল ছুটির পরে ফেরার নিশ্চয়তা বিধানে সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তবে ব্যাপক অনিয়ম ও সমন্বয়হীনতার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন চালুর প্রকল্প।

অভিযোগ উঠেছে, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে নিম্নমানের এ মেশিন কেনার ‘নির্দেশনা’ দেয়া হয়। ‘নির্দেশনা’ পেয়ে যেসব বিদ্যালয় মেশিন কিনেছে, তাদের অধিকাংশই এখন অকেজো হয়ে পড়েছে।

প্রতিটি মেশিন কেনা-বাবদ ১৩ থেকে ১৮ হাজার টাকার অবৈধ ‘বাণিজ্য’ হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্পটি থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা।

অনৈতিক ‘বাণিজ্যের’ বিষয়টি জানাজানি হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আর কোনো ডিজিটাল হাজিরা মেশিন না কিনতে নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে কারণে যেসব বিদ্যালয় আগেই কিনেছে, সেখানেও বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ব্যবহার হচ্ছে না।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন অকেজো হয়েছে কি-না, আমার জানা নেই। মেশিন কেনার জন্য আমরা শুধু স্পেসিফিকেশন নির্ধারণ করে দিয়েছি। কোনো কোম্পানি নির্ধারণ করা হয়নি। যদি কেউ আমার নাম ভাঙিয়ে থাকেন, তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

তিনি এ সময় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মৌখিক নির্দেশ দেন।

জানা যায়, দেশে ৬৫ হাজার ৫৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত দামে প্রায় ২০ হাজার বিদ্যালয়ে এ মেশিন কেনা হয়েছে। স্পেসিফিকেশন অনুসারে বাজারে এসব মেশিনের দাম কোম্পানিভেদে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু সেই ‘নির্দিষ্ট’ কোম্পানিটি নিচ্ছে ২৫ হাজার থেকে ৩৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। সে হিসাবে প্রতিটি মেশিন কেনা-বাবদ ১৩ থেকে ১৮ হাজার টাকার ‘বাণিজ্য’ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয়-সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে আকরাম আল হোসেন বলেন, ‘ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয়-সংক্রান্ত বিষয়ে কোথায় অনিয়ম হয়েছে তার তথ্য দেন, আমরা ব্যবস্থা নেব। নির্দিষ্ট করে না বললে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না। কোথাও কোনো অনিয়ম হয়েছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’