“নষ্ট হয়ে যাচ্ছে” বাক্যটি প্রায়ই শুনতে পাই, সত্যি কি বিষয়টা তাই!
রাস্তাঘাটে পথ চলতে আমরা প্রায়ই এই শব্দ গুলো শুনতে পাই। এই কয়েকদিন পূর্বে ক্লাস টুতে পড়া এক ছাত্রের অভিভাবকের মুখে শুনলাম, স্যার, স্কুল কবে খুলবে? বাচ্চাতো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কথাটা একটু চিন্তা করার মতোই। মানুষ কিভাবে নষ্ট হয়। তা আবার, মাত্র আট বছরের একটা শিশু। সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে, বিচ্যুতি আচরণ শব্দটির সাথে আমি আগেই পরিচিত ছিলাম। মানুষ যখন, সামাজিক, পারিবারিক রীতির বাহিরে গিয়ে আচরণ করে, কিন্তু সেগুলো রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা শাস্তি যোগ্য নয় সেসকল আচরণই হচ্ছে, বিচ্যুত আচরণ। অর্থাৎ কাঙ্ক্ষিত আচরণের মধ্যে পড়ে না এগুলো। আর এসব আচরণ যারা করে, তাদেরই অন্যরা বলে থাকে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
# একটি ছোট্ট শিশু যদি বাবা মার কথা না শোনে, খেতে না চায়, দুষ্টামি করে তবে তার বাবা-মা বলেন, বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। # শিশুটি যখন একটু বড় হয়ে স্কুলে যায় কিন্তু বাসায় পড়তে চায় না, সারাক্ষণ কার্টুন দেখতে চায়, মোবাইলে গেম খেলতে চায়, তখন অনেকেই বলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
# শিশুটি শৈশব থেকে কৈশোরে যখন পৌঁছায় তখন যদি সে বয়স্কদের সম্মান না দেখায়, চুল এলোমেলো করে রাখে, সার্টের বুতাম খুলে চলে তখন অনেকেই বলে উঠে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। # আরেকটু বড় হয়ে যৌবনের শুরুতেই যখন প্রেম ভালোবাসায় জড়িয়ে পরে, অন্যের সাথে বিবাদ করে, তর্কে জড়ায়, সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ে তখন অনেকেই বলে উঠে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। # লেখাপড়া শেষ করে চাকরির পিছনে ঘুরতে ঘুরতে বয়সটা শেষ করে টিউশনি সেরে বাজারে চায়ের দোকানে বসে চা খেয়ে রাত করে বাড়ি ফিরে, তখন অনেকেই বলে উঠে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। # কর্মজীবনে যেনতেন ভাবে অল্প সময়ে টাকা কামিয়ে হঠাৎই ফুলেফেঁপে উঠলে অনেকেই খুব নিরবে বলে উঠে একেবারেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
# শেষ বয়সে পূর্ব কৃতকর্মের অনুশোচনায় বিভিন্ন পীর দরবেশের দরগায় দৌড়ানো শুরু করলে মানুষ বলে উঠে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পুরোপুরি। হাঁ প্রথম থেকেই যারা বলছেন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাদের কথাটি বলার যুক্তি আছে। উনারা সরল রেখায় জীবন পরিচালিত হবে সেটিই আশা করেন। কিন্তু, সকলের চলার পথ সরল থাকে না সবসময়। অনেক আঁকাবাকা থাকে সে পথ। কিন্তু আমাদের চেষ্টা থাকবে সকলের পথটা যেন সরলপথই হয়। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ দায়িত্ব নিতে হবে প্রতিটি পরিবারকে। পরিবারের বয়স্করাই পারেন, শিশুদের কাঙ্ক্ষিত পথের দিকনির্দেশনা দিতে। এরপর ধাপে ধাপে পাড়া, মহল্লা,বিদ্যালয়,সমাজ,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সকলকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কিছু অভিভাবক সন্তানের মন্দ আচরণে নিরব সায় দেয়। এতে করে ঐ সকল সন্তান আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ে। এ বিষয়টি সকলকেই মাথায় রাখতে হবে, সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা আরও বেশি জরুরি।
সকলকেই অপরাধের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করতে হবে। একটি বিষয় মনে রাখা চাই, কেউ নষ্ট হয়ে গেলে সহজে ভালো করা যায় না। নষ্ট লোক দ্বারা শুধু ক্ষতিই হয় কোনই উপকার হয় না। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ কখনো নষ্ট হয় না, সে পরিবর্তিত হয়। সেটা ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক হতে পারে। সকলের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন কামনা করছি। সরল পথে চলা মানুষে ভরে উঠুক সোনার বাংলাদেশ।
মোঃ সাইফুল হক খান সাদী
অনার্স,মাস্টার্স সমাজবিজ্ঞান।