অনুপস্থিত প্রাথমিকের ৯ শিক্ষক, ৩ জনকে বরখাস্ত

খোজ মিলছেনা ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯ জন শিক্ষকের। চাকরি পেয়ে মাসের পর মাস কর্মস্থলে তাদের কোনো দেখা নেই। স্কুলে না আসায় বেতন বন্ধ থাকলেও চাকরিতে বহাল আছেন তারা। তবে বিভাগীয় মামলা রুজুর মাধ্যমে ৩ জনকে ইতিমধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন চলতি মাসে আরও কয়েকজন চাকরিচ্যুত হবে।

আবার অনেক শিক্ষকের মাথার ওপর বিভাগীয় মামলার খড়গ ঝুলে থাকলেও তারা কর্মস্থলে আসেন না। ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত প্রাথমিকের এসব শিক্ষকের তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটী সরকারি প্রথমিকের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল মাওয়া থাকেন আমেরিকায়। দীর্ঘদিন সেখানে তিনি স্বামীর সঙ্গে বসবাস করছেন। কিন্তু এখনো তিনি কাগজ কলমে চাকরি করছেন। ঝিনাইদহ পৌরসভা এলাকার খান-এ খোদা সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক উম্মে সালমা দীর্ঘদিন বসবাস করছেন কানাডায়। এই দুই শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে।

এভাবে জেলার ৯ জন শিক্ষকের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। তারা কোথায় আছেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যও নেই প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে। এসব শিক্ষকদের মধ্যে বেশিরভাগ দেশের বাইরে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

মহেশপুরের ঘুগরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসরিন আক্তার প্রায় ৭ মাস স্কুলে অনুপস্থিত। তিনি কোথায় আছেন তা বলতে পারেননি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু আহসান। তিনি জানান, নাসরিন আক্তারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। দ্রুতই তাকে চাকরিচ্যুত করার পক্রিয়া চলছে।

হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামের জেহের আলী জোয়ারদারের ছেলে মতিয়ার রহমান চাকরি করেন তাহেরহুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি এক বছর ধরে স্কুলে আসেন না। কর্মস্থলে যোগদান করার জন্য একাধিকবার চিঠিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার কোনো হদিস নেই। তার মোবাইলটিও দীর্ঘদিন বন্ধ। একই উপজেলার দখলপুর গ্রামের মনোয়ার হোসেনের মেয়ে শ্রাবনী ইয়াসমিন চাকরি করেন সোনাতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি দেশে থাকলেও কর্মস্থলে আসেন না। এই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান বলে জানান হরিণাকুন্ডু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম আব্দুর রহমান।

শৈলকুপার ঝাউদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন ও কাতলাগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পিএসসির সুপারিশকৃত নন ক্যাডারে যোগদান করেন। কিন্তু যোগদানের পর থেকেই উধাও। একদিনও স্কুলে আসেননি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ২০১৮ সালের ২১ মার্চ থেকে ও আলমগীর হোসেন একই বছরের ১৮ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।

কোটচাঁদপুর উপজেলার এঁড়েনদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সামছুন্নাহার শিমু এক বছর ধরে কর্মস্থলে নেই। কোটচাঁদপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অসিত বরণ পালের ভাষ্যমত, সামছুন্নাহার শিমু ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কোন যোগাযোগ রাখেন না। শিমু অন্য কোনো চাকরি করতে পারেন বলে জানান তিনি।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা খাতুন জানান, তার উপজেলার দামোদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহিনুর রহমান দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

জেলাব্যাপী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯ জন শিক্ষকের কর্মস্থলে অনুপস্থিতের বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ইতিমধ্যে আমরা বিভাগীয় মামলা দায়ের করে ৩ জনকে চারকিচ্যুত করেছি। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে আরও কয়েকজন চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত হবেন। শৈলকুপায় দুইজন পিএসএসসির সুপারিশে নন ক্যাডারে প্রাথমিকে চাকরি পেয়েছিলেন। তাদের ব্যাপারে পিএসসির মতামত চাওয়া হয়েছে। মতামত আসলে তারা চাকরি হারাবেন।

তিনি আরও বলেন, যারা বিদেশে বা অন্য কোথাও চাকরি করছেন তাদের বেতন বন্ধ করে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। হয়তো ২/৩ মাসের মধ্যে তাদেরকেও চাকরিচ্যুত করা হবে।