প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের রায়ে কিভাবে লাভবান হবেনঃ নথিসহ

২০১৪ সালের ৯ মার্চ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে এ তারিখেই দেশের সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বিষয়ে এক যুগান্তকারী ঘোষণা আসে। যে ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করণ করেন। এছাড়া একই দিনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন ও জারি করে।

কিন্তু তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কৌশলে সরকারি প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল প্রবেশ পদে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের ১১তম গ্রেড ও প্রশিক্ষণবিহীনদের জন্য ১২তম গ্রেড নির্ধারণ করে।
অথচ এক্ষেত্রে তুলনামূলক ভাবে দেখা যায় অন্য নন-ক্যাডারভুক্ত দ্বিতীয় শ্রেণির পদে অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তারা জাতীয় বেতন স্কেলের ১০ম গ্রেডে বেতন পেয়ে থাকেন।
এছাড়া এর আগে বিগত ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেড করা সহ গেজেটেড পদমর্যাদা দেওয়ার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। তাছাড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন উভয় ক্ষেত্রেই চাকরিতে প্রবেশকালীন সময়ে বেতন স্কেল ১০ম গ্রেড করাসহ গেজেটেড পদমর্যাদা ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে কার্যকর করতে নির্দেশ দেয় আদালত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের রায় সত্ত্বেও কাল ক্ষেপণ করতে থাকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

এদিকে সর্বশেষ ৬ জানুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর সমন্বিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দিয়েছেন প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদেরকে ২য় শ্রেণির পদমর্যাদা দিতে ও সে অনুযায়ী ১০ গ্রেডে বেতন প্রদান করতে। এছাড়া এই রায়ের অন্তর্ভুক্ত রায় হল, হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে প্রধান শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা নিতে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তার ক্ষমতা দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, যে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় হয়েছে, তাতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজসহ ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক হাইকোর্টে ওই রিট দায়ের করে ছিলেন।

এখন দেখা যাক ১০ম গ্রেড প্রধান শিক্ষকবৃন্দ প্রাপ্ত হলে, কে কীভাবে লাভবান হবেনঃ
১) ১০ গ্রেড পেলে প্রধান শিক্ষকবৃন্দ হবেন ২য় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা।
২) এছাড়া এই রায়ের ফলে তারা বকেয়া বেতন প্রাপ্ত হবেন ০৯/০৩/২০১৪ তারিখ থেকে।
৩) সেল্ফ ড্রয়িং ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবেন।
৪) প্রধান শিক্ষকবৃন্দ প্রাপ্ত হবেন ‘ড্রয়িং এন্ড ডেসবার্সমেন্ট’ ক্ষমতা বা নিজেও নিজের স্টাফদের বেতন সংক্রান্ত আয়ন ব্যয়ন কর্মকর্তা।
৫) চার বছর পর বা ২০১৮ সালে সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত হবেন।
৬) এছাড়া ৮ বছর পর অর্থাৎ ২০২২ সালে টাইমস্কেল প্রাপ্ত হবেন।

এর বাইরে এ রায় অনুযায়ি জাতিয়করণকৃত প্রধান শিক্ষক ও সর্বকনিষ্ট ২০১১ সালে নিয়োগকৃত প্রধান শিক্ষক এর গ্রেড হবে নিম্নরুপঃ ০৯/০৩/২০১৪ সালে ১০ম গ্রেড, ২০১৮ সালে প্রথম সিলেকশন গ্রেড পেয়ে তিনি যাবেন ৯ম গ্রেডে এবং ২০২২ সালে টাইমস্কেল পেয়ে তিনি যাবেন অষ্টম গ্রেডে। সাথে অন্যন্য সুবিধাদি পাবেন। 

এছাড়া চলতি দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকগন যেভাবে লাভবান হবেনঃ বর্তমানে চলতি দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকগন রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে নিয়োগপ্রাপ্ত। তারা আর সহকারি শিক্ষক পদে ফিরবেন না। হয় চলতি দ্বায়িত্ব নিয়ে অবসরে যাবেন নতুবা প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভের সাথে সাথে উপরোক্ত সকল সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন। কাজেই প্রধান শিক্ষক পদে আসার আগেই তাদের জন্য তৈরি রয়েছে এক সাজানো বাগান। 

এই রায়ের ফলে সুবিধা কারা প্রাপ্য হবেনঃ যেহেতু ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক এই মামলার বাদি কাজেই কোর্ট সর্বপ্রথম তাদের গেজেটভুক্ত করার নির্দেশনা দেবেন। পাশাপাশি সদাশয় সরকার যদি মনে করেন সকল প্রধান শিক্ষকের জন্য এই সুবিধা প্রয়োজ্য তা হলে সরকার নিজেই জিও (গভরমেন্ট অর্ডার) জারি করতে পারেন। তখন সারা বাংলাদেশের প্রধান শিক্ষকগন এ সুবিধার আওতায় আসবেন।

প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রাপ্তির কেসের নথি pdf ডাউনলোড

আর যদি সরকার এর পক্ষ থেকে জিও জারি না করেন তবে ১০ম গ্রেড প্রত্যাশী সকল প্রধান শিক্ষককে এই মামলার পক্ষভুক্ত হয়ে মামলায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করে কোর্টের রায় নিতে হবে। তিনি নিজের নামে রায় তৈরি হওয়ার পরই কোর্ট তাকে গেজেটভুক্ত করার নির্দেশ দেবেন।