মাছরাঙা টিভিতে প্রাথমিক ডিজির সাক্ষাৎকারে ক্ষুব্ধ প্রাথমিক শিক্ষকরা

“পৃথিবী পরিবর্তনশীল”  চিরন্তন এই সত্যকেই অস্বীকার করলেন প্রাথমিকের ডিজি। হাস্যকর না দুঃখজনক? “প্রাথমিকের সহকারী  শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রাপ্তির দাবী কতটা যৌক্তিক?”।

“মাছরাঙা” টেলিভিশনের এমন প্রশ্নে  প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়ের দেওয়া জবাবে গোটা শিক্ষক সমাজ তথা শিক্ষিত ও বিবেকবান মানুষ মাত্রই বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন। হয়েছেন হতাশ, ক্ষুব্ধ।

মহাপরিচালকের উত্তর যেন দিবালোকের মতো প্রমাণ করছে যে, তিনি এ গ্রহের বাসিন্দা ই নন।তাই এ বিষয়ে তার নুন্যতম  কোন ধারণা বা অভিজ্ঞতা ও নেই। এর আগেও শিক্ষক বদলী বিষয়ে তিনি অদ্ভুত, অপ্রত্যাশিত, অপ্রাসঙ্গিক ও অভিজ্ঞতা বহির্ভূত মন্তব্য করেন শিক্ষা বিষয়ক পত্রিকার এক সাংবাদিকের সাক্ষাৎকারে।

তিনি মাছরাঙা টেলিভিশন প্রতিবেদকের প্রাথমিক  শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রাপ্তির যৌক্তিকতার প্রশ্নের উত্তরে বলেন “শিক্ষকরা নিয়োগ বিধি দেখেই চাকুরীতে যোগদান করেছেন।চাকুরীতে যোগদানের পর ১০ম গ্রেড দাবী করলেই তো তা পাবে না।”

একটি ডিপার্টমেন্টের সর্বোচ্চ পদে আসীন বা দায়িত্বশীলের এমন বক্তব্য একদিকে যেমন শিক্ষকদের হতাশ করেছে, অন্যদিকে এতোবড় দায়িত্ব পালনে তার যোগ্যতা বা অযোগ্যতার প্রশ্ন ও দেখা দিয়েছে লক্ষ লক্ষ শিক্ষকদের মনে।

পৃথিবী যেমন স্থীর নয়,ঘুর্নায়মান। পৃথিবীর সব কিছুও তেমনি পরিবর্তনশীল। পৃথিবীতে অস্থিত্বশীল প্রতিটি বস্তু বা প্রাণী পরিবর্তনের এ ধারা বা ছোঁয়ার বাইরে নয়। এটাই চিরন্তন। পরিবর্তনের এ চিরন্তন নীতির প্রয়োগ ঘটেছে  নার্স, কৃষি উপসহকারী, ইউনিয়ন সচিব সহ অনেক পদের গ্রেড পরিবর্তনে, যাদের যোগ্যতা প্রাথমিক শিক্ষকদের চাইতে কম।

তাঁরাও তো নিয়োগ বিধি দেখেই যোগদান করেছিলেন।তাহলে তাদের টা কেমনে পরিবর্তন হলো?

হ্যা,পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সব কিছুই পরিবর্তন তো হবেই, যা মহাপরিচালকের চারপাশেও ঘটছে।অথচ তিনি পৃথিবীর পরিবর্তনশীলতা কে গায়ের জোরে কিংবা ক্ষমতার জোরে কিংবা নিজস্ব চিন্তা চেতনা উদ্ভুত ভাবনায় তা আটকিয়ে রাখার জন্য অনড়, অটল।

শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়,দীর্ঘ প্রায় তিন বছর ধরে তার ব্যক্তিপ্রসুত ভ্রান্ত ধারণায় শিক্ষক বদলী বন্ধ রেখেছেন। যার কারণে লক্ষ, লক্ষ শিক্ষক বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা সহ পরিবার পরিজনদের দেখভাল করার বিষয়ে চরম দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছেন।শিক্ষকদের শত অনুরোধে ও তার হৃদয় একটুও গলেনি।

বার,বার দিনের পর দিন তিনি অনলাইন বদলীর  উদ্বোধন ও চালু করার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। শিক্ষকদের করেছেন হতাশ, তাদের ফেলে রেখেছেন কষ্টের মহাসাগরে।

শিক্ষক বদলী বিষয়ে তিনি শিক্ষা বিষয়ক পত্রিকার (সাংবাদিক নাম না প্রকাশের অনুরোধ করেছেন) এক সাংবাদিককে বলেন, “সবাই যদি ঢাকায় বদলী হয়ে আসতে চান, তাহলে অন্যান্য জায়গায় চাকরি করবে কে? প্রাইমারির শিক্ষক নিজ এলাকায় চাকরি করবে। তারা পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে চড়ে স্কুলে যাবে। বদলীর এতো কি প্রয়োজন?”

বিস্ময়ে হতবাক হতে হয় এমন মন্তব্যে। ঢাকায় কি সবাই বদলী হবে বা হতে পারবে? বদলী সংক্রান্ত বিষয়ে তাহলে আমরা কতটুকু অবগত?

আর পায়ে হেটে বা সাইকেলে চড়ে যাবে- এমন ধারণা ও প্রমাণ করে, এতো নিম্নবর্গের শিক্ষকদের ১০ ম গ্রেড দিলে জাতি কলঙ্কিত হবে। শিক্ষকরা অস্পৃশ্য, তৃতীয় শ্রেণীর। আর ওনারা ভদ্র পল্লীর, উঁচু বিল্ডিংয়ের এসি রুমে বসা মানুষ।

কিন্তু সবারই মনে রাখা উচিত -এই তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষকদের দেয়া হাতে খড়ি নিয়েই তারা ঐ স্হানে, ঐ পদে আসীন হয়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক শিক্ষকদের যথাযথ মুল্যায়ন করার।

সঠিক স্হানে সঠিক লোকের পদায়নেই আসুক শিক্ষকদের স্বপ্ন পূরণের মাহেন্দ্রক্ষণ। সুশিক্ষার প্রখর দীপ্তি সকল প্রতিবন্ধকতার কুয়াশা দুর করে জাতিকে করুক আলোকিত, উদ্ভাসিত।

জয় হোক শিক্ষার। নন্দিত হোক শিক্ষক সমাজ। মুল্যায়ন হোক নায্য প্রাপ্তি, সকলের নায্য দাবী।

-এম ওয়াদুদ ফাররোখ, (ডবল এমএ, সি-ইন-এড, বিএড), সহকারী শিক্ষক, জিয়াপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট ও সভাপতি, বাংলাদেশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, ক্ষেতলাল উপজেলা শাখা, জয়পুরহাট।