একজন প্রধান শিক্ষকের চোখে প্রাথমিকে শিক্ষার মান কমার কয়েকটি কারন
প্রাথমিক শিক্ষা সচিব অত্যন্ত আক্ষেপের সাথে বলেছেন এখনো ৬৫% শিক্ষার্থী নাকি সাবলীলভাবে বাংলা পড়তে পারে না যদি আংশিকভাবে ও সত্য হয় তবে এর দায় সরকারের নীতি নির্ধারক সহ সমগ্র জাতিকে নিতে হবে।
কেন নিতে হবে তার কিছু চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলোঃ
১) একজন শিক্ষক অনুধাবন করতে পারে শিক্ষার্থীর ধরন অনুযায়ী কি ধরনের আচরণ প্রয়োগ করতে হয়? কখনই একজন আদর্শ শিক্ষক পড়াশোনাই মনোযোগী বা ভদ্র শিক্ষার্থীকে ভালবাসা ব্যতীত বেতের শাষণ প্রয়োগ করেন না।
কিন্তু অভদ্র ও অবাদ্য শিক্ষার্থীকে কিভাবে নৈতিক আচরণ ও শিক্ষা দান করবেন তার কোন ব্যাখ্যা কোন নীতি নির্ধারক মহল আজ ও দেন নাই।
ফলে শিক্ষকের কাছ থেকে বেতের শাষণ কেড়ে নেওয়ায় ঐ অবাদ্য শিক্ষার্থীরা পুরো ক্লাসকে কুলষিত করছে এবং সঠিক শিক্ষাদান ব্যহত হয়।
অন্যদিকে কিছু শিক্ষক (সংখ্যায় অনেক কম)অসতর্কতা বশতঃ শারিরীক কোন আঘাতের শিকার হলে তা পাব্লিক লি প্রকাশ করে ঐ শিক্ষককে সামাজিক ভাবে হেয় করা, এমনকি বদলি বা বরখাস্ত করা হয় যেন মনে হয় ঐ শিক্ষার্থী পূর্ব জনমের শত্রু ছিল(কিন্তু সরকারের উচিৎ ছিল শিক্ষকদের নিয়ে কাউন্সিলিং করা, যেন শিক্ষকরা তার সর্বোচ্চ কৌশল ব্যবহার করে পাঠদান করেন)
এবং সাথে সাথে গ্রামের অসচেতন ও অশিক্ষিত কিছু অভিভাবককে উৎসাহিত করা হয় যেন তার অবাদ্য সন্তাকে মেরে মহা অপরাধ করেছে।
অতএব বেতের শাসন উঠে যাওয়ায় শিক্ষার মান কমে যাওয়ার পাশাপাশি ধর্ষন ও হত্যার মত সামাজিক অবক্ষয়ের একমাত্রই অন্যতম কারন।
২)উপবৃত্তি না দিয়ে শিখন সামগ্রী দিলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আগ্রহী হত। অন্যদিকে অসচেতন ও গরীব অভিভাবক সেই উপবৃত্তির টাকা কিস্তির কাজে ব্যবহার করেন।
৩)একবার ভেবে দেখুন তো একটি বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে দিয়ে প্রতি বছর কি কি কাজ করান আর প্রতিদিনই পরিপত্র তো আছেই।
একবার ভেবে দেখুনতো, মোবাইলে উপবৃত্তি দেওয়ার নামে শিক্ষকদের কি পরিমান কর্মঘন্টার অপচয় হয়।এর পরও আমরা অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠান এর চেয়ে শতভাগ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।
৪) একবার ভাবুনতো একজন শিক্ষকের কোন অবৈধ আয় আছে কি না যদি না থেকে থাকে তবে টোনাটুনির (মা-বাবা বাদই দিলাম) সংসার চালাতে কত লাগে আর কত দিচ্ছেন? সংসার খরচের চিন্তা মাথায় রেখে শিক্ষকের কাছ থেকে সর্বোচ্চ চাওয়া কি বেশি নয়?
৪) একবার ভাবুন তো, যদি ভাল কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ কোন পুরস্কার না থাকে বা প্রমোশন না থাকে তবে কেন শিক্ষকরা ত্যাগি হবেন।
পরিশেষে একটি কথা বলি,এককালে মহাজনের সন্তানেরা পান্ডিত্য করতেন, সংসার চালাতে নয় কেবলই শখের বশে দেশকে আলোকিত করতে। আর এখন এমন ধনাঢ্য ব্যক্তির প্রাইমারিতে আগমন শুধুই কল্পনাতীত।