ভেতরে লাইট জ্বালিয়ে ক্লাস,বাইরে অন্ধকার

>> সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে চলছে কোচিং বাণিজ্য 
>> অভিভাবকদের অনুরোধে কোচিং খোলা রাখা হয়েছে
>> কিছু কোচিংয়ে ক্লাসের সময়সূচিতে পরিবর্তন
>> পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ করা অযৌক্তিক : অ্যাসোসিয়েশন ফর স্যাডো এডুকেশন অব বাংলাদেশ
>> আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে : ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার

এসএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে এক মাস কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানছেন না অনেকেই। সরকারের নির্দেশ অমান্য করে রাজধানীর ছোট-বড় অনেক কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম চলছে। আবার অনেক কোচিং সেন্টারের সামনে ঝুলছে বন্ধের বিজ্ঞপ্তি। কোনোটিতে আবার বাইরে তালা ঝুলিয়ে অন্ধকার রেখে ভেতরে লাইট জ্বালিয়ে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। সোমবার সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষা। এ পরীক্ষা সামনে রেখে গত ২০ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় মনিটরিং ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক সভা হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নিরাপত্তাজনিত কারণে ২৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। সে অনুযায়ী গতকাল রোববার (২৭ জানুয়ারি) থেকে দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকার কথা।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর ইন্দিরা রোডে ৩২/এ বীকন কোচিং সেন্টার বাইরে থেকে বন্ধ। কিন্তু ভেতরে ক্লাস চলছে। সেখানে ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করছিলেন। ক্লাসের শিক্ষক ইসমাইল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে বিবিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্লাস নেয়া হচ্ছে।’ এ কথা বলে তিনি ক্লাস থেকে সটকে পড়েন।

শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, কোচিং সেন্টার বন্ধ, তবে আমাদের অনুরোধে স্যার ক্লাস নিতে এসেছেন।

ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের উল্টো পাশে বিটিআই প্লাজার ষষ্ঠ তলায় রয়েছে সাইফুর’সের কোচিং সেন্টার। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের মতো ভর্তি-ক্লাসসহ সব কার্যক্রম চলছে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাডমিশন কোর্সে’ অফিস স্টাফরা ভর্তি করাচ্ছিলেন।

 

সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে এ ব্র্যাঞ্চের ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা মূলত বিভিন্ন দেশের ভাষার উপর বেশি কোর্স করিয়ে থাকি। এ কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। পাশাপাশি জুন-জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাডমিশন কোর্স শুরু করা হয়। তাই সারাবছর অ্যাডমিশন কোর্সে ভর্তি নেয়া হ

তিনি বলেন, এখন যদি আমরা ভর্তি না করি তবে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পাওয়া সম্ভব হবে না। এ পর্যন্ত আমরা শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করে প্রথম পর্যায়ে কয়েকটি ব্যাচ গঠন করেছি। আগে যারা ভর্তি হচ্ছে তারাই আগের ব্যাচে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। পরে যারা ভর্তি হবে তাদের পরের ব্যাচে সুযোগ দেয়া হবে।

ইন্দিরা রোডের ৩৫/৩ নম্বর বাড়ির নিচতলায় গ্লোবাল কোচিং সেন্টার। প্রতিষ্ঠানের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটের বাইরে অন্ধকার। ভেতরে লাইট জ্বালিয়ে দুটি কক্ষে ১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস চলছে। অপরপাশে নিয়মিত ভর্তি কার্যক্রমও চলছে।

কোচিং সেন্টারের ম্যানেজার সালাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গ্লোবাল কোচিং সেন্টার একাডেমিক নয়, ল্যাঙ্গুয়েজ কোচিং। সরকার একাডেমিক কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, তবে ল্যাঙ্গুয়েজগুলো নয়। এ কারণেই আমাদের কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।

 

মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরের পাশে ১৫৬ সেনপাড়ার বাড়ির পাঁচতলা ভবনে অ্যাম্বিশন কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, এখানের এক অংশ বন্ধ রেখে অন্য অংশে একাধিক কোর্সের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। তিনটি ক্লাসে প্রায় ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী সেসময় উপস্থিত ছিলেন।

কোচিং সেন্টারের ম্যানেজার জব্বার ভূঁইঞা http://www.gpsbd24.com/ বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষার আগ পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রস্তুতিমূলক ক্লাস করানো হচ্ছে। নতুন ভর্তি ও ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেই শুধু পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক কয়েকটি ক্লাস নেয়া হচ্ছে।’

অন্যদিকে, আজিমপুর ১৫৯/১/এ ডিভাইজ সায়েন্স একাডেমিতে গিয়ে দেখা যায়, এ কোচিং সেন্টারে মাধ্যমিক থেকে কলেজ পর্যায়ে বিজ্ঞান বিষয়ে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। তবে বন্ধের নির্দেশনা জারির পরে তাদের ক্লাসের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে ভোর ৬টা থেকে ৮টা ও বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কোচিং করানো হচ্ছে।

 

জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সন্দীপ  বলেন, শিক্ষকরা ক্লাসে ভালোভাবে পড়ান না বলেই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কোচিংয়ে নিয়ে আসেন। আমরা তো প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণ করি না, তবে কেন পাবলিক পরীক্ষার আগে কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়? যেখান থেকে প্রশ্নফাঁস হচ্ছে সেখানে নজর দিলে কাজের কাজ হবে, কোচিং সেন্টার বন্ধ করে প্রশ্নফাঁস রোধ হবে না।

তিনি বলেন, আমরা প্রশ্নফাঁস করি না, এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িতও নই, অভিভাবকদের অনুরোধে আমাদের কোচিং খোলা রাখা হয়েছে।

 

অন্যদিকে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গত শুক্রবার থেকে নামিদামি কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। অনেকে প্রতিষ্ঠানের সামনে বন্ধের বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দিয়েছেন। কেউ আবার কালো ব্যানারেও এমন নোটিশ ঝুলিয়ে রেখেছেন। তবে সব নোটিশেই উল্লেখ করা হয়েছে, ‘শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে।’

 

জানতে চাইলে কোচিং সেন্টার বন্ধের দায়িত্বে থাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার শেখ নাজমুল আলম  বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে হবে। যদি কেউ এর ব্যত্যয় ঘটায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন- ‘প্রশ্নফাঁস’ আতঙ্কে শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারা

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন ফর স্যাডো এডুকেশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহামুদুল হাসান  বলেন, সব কোচিং সেন্টারকে সরকারি নির্দেশনা মেনে প্রতিষ্ঠান চালাতে হবে। সরকারি ঘোষণার পর কোচিং সেন্টারের মালিকদের নিয়ে সভা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এখনো দুই-একটি কোচিং খোলা রাখা হয়েছে, আমরা তাদের সর্তক করে দিয়েছি। তারপরও যদি তারা নির্দেশনা না মানের তবে আমাদের কিছুই করার থাকে না। তবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের গড়ে তোলা কোচিং সেন্টার যদি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায়। তারা এ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য না হওয়ায় আমাদের কিছু করার নেই।

পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ করাটা  http://www.gpsbd24.com/একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত দাবি করে মাহামুদুল হাসান সোহাগ বলেন, এ যাবত কোচিং সেন্টার বন্ধ করে প্রশ্নফাঁস বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। বরং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে তা বন্ধ হয়েছে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান অপকর্ম করে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক, সবার উপর সে অন্যায় চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়।