শুরুতেই বিতর্ক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ক্রয়ে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনে ২৬ হাজার ল্যাপটপসহ তথ্যপ্রযুক্তিসামগ্রীর ক্রয় পদ্ধতি নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে। উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে ডিপিএম প্রক্রিয়ায় শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ের এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ডিপিই কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। ডিপিই’র কর্মকর্তাদের অনেকে বলছেন, ডিপিএম প্রক্রিয়ায় শিক্ষা উপকরণ ক্রয় তা মানসম্মত না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ডিপিই সূত্র জানায়, দেশের প্রতি উপজেলায় একটি করে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ভিত্তিক ক্লাসরুম পরিচালিত হচ্ছে। এর আলোকেই একসঙ্গে দেশের বিদ্যমান সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অর্থাৎ ৬০ হাজারের বেশি বিদ্যালয়ে ই-লার্নিং ম্যাটেরিয়ালভিত্তিক ক্লাসরুম পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ লক্ষ্যে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগও করছে। এদিকে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (ওটিএম) কেনাকাটায় আগ্রহী বেসরকারি সরবরাহকারীরা। এ নিয়ে বেসরকারি সরবরাহকারীরা কয়েক দফা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে লিখিতও দিয়েছেন।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল হোসেন বলেছেন, ‘আমরা উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করেছিলাম, সেটা বাতিল করেছি। এটা সরকারের সিন্ধান্ত। পরবর্তীতে সরাসরি মাল কেনার জন্য টিএন্ডটি (ডাক ও টেলিযোগাযোগ) মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। তাদের মতামত পেয়েছি; তারা আমাদের জানিয়েছেন, তারা সরকারি স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও স্পিকার সরবরাহ করতে পারবেন। এখন সরকার সিন্ধান্ত নেবে, ডিপিএম হবে কিনা- তবে সেটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’

ডিপিই’র একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিন্ধান্ত রয়েছে, কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ওটিএম (ওপেন টেন্ডার মেথড-উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি) অনুসরণ করার। কিন্তু এই প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে প্রায় দেউলিয়া হতে যাওয়া ‘টেলিফোন শিল্প সংস্থা’র (টেশিস) মাধ্যমে নিম্নমানের পণ্য কেনার চেষ্টা করলে সেখানে দুর্নীতি বা লুটপাটের অভিযোগ আসতেই পারে। তাছাড়া টেশিস’র মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক প্রকল্প আইসিটি ফেইজ-১’ এর অধীনে কেনা প্রায় ২৪ হাজার আইসিটি শিক্ষা উপকরণের অধিকাংশই অকেজো হয়ে পরেছে।’ টেশিস হলো ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি সংস্থা।

ডিপিই’র সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, সরকার সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী সব শিশুর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।

দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ হাজার ৫০০টি বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম চালু আছে। এবার চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের (পিইডিপি-৪) আওতায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য ২৬ হাজার ল্যাপটপ কেনা হচ্ছে। সঙ্গে থাকছে ২৬ হাজার সাউন্ড সিস্টেম ও ২৬ হাজার প্রজেক্টর। এজন্য ৩৩৮ কোটি টাকার সংস্থান আছে।