শনিবারও সরকারি ছুটি চান প্রাথমিক শিক্ষকরা!

বিদায়ী বছরের শেষের দিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর ২০২০ সালের বাৎসরিক ছুটির তালিকা ও সময়সূচি প্রকাশ করেছে। ২০২০ সালের বাৎসরিক ছুটি আগের চেয়ে ১০দিন বাড়িয়ে ৮৫দিন করা হয়েছে। তবে এক শিফটের সময়সূচীর পরিবর্তে প্রাথমিকে করা হয়েছে ২ শিফট। প্রথম শিফটে বিদ্যালয়ে সময়সূচি ৯টা হতে ৩টা এবং ২য় শিফটের বিদ্যালয়ে ৯টা হতে ৪টা পর্যন্ত করা হয়েছে।

নতুন সময় সূচিতে দেখা গেছে বৃহস্পতিবারে শিক্ষকদের প্রথম শিফটের শিক্ষকদের জন্য সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত এবং ২য় শিফটের শিক্ষকদের জন্য সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। যা পূর্বে বৃহস্পতিবারে অর্ধদিবস হিসেবে স্কুলের সময়সূচি ছিল সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত।

এদিকে নতুন এই সময়সূচী নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ এই সময়সুচীতে খুশি হলেও অধিকাংশই খুশি নন। তাদের দাবি প্রাথমিক বিদ্যালয় হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের জন্য আর এখানে এই শিশুদের যদি এই সময়সূচীর মধ্যে বিদ্যালয়ে আবদ্ধ করে রাখা হয় তাহলে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটা অসম্ভব কেননা এই বয়সী শিশুদের বই এর মধ্যে আবদ্ধ করে না রেখে খেলাধুলা বিনোদনের মধ্যে রাখলেই বেশি শিখবে এবং মানসিক বিকাশ ঘটবে।

প্রাথমিক শিক্ষক ও অভিভাবকদের দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে এই কোমলমতী শিশুদের কথা বিবেচনা করে তাদের জন্য বিদ্যালয়ের সময়সূচী সকাল দশটা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত করা সম্ভব হলে এর থেকেও কমিয়ে আনা। কারণ এই শিশুদের যত বিদ্যালয়ে আবদ্ধ করে বই এর চাপে রাখা হবে ততই তাদের বিকাশে ব্যঘাত ঘটবে।

পুরাতন সময় সূচীতে প্রাথমিকে অর্ধদিন কর্মদিবস থাকলে নতুন সময়সূচীতে পূর্ণ দিবস রাখা হয়েছে। এটা নিয়েও শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাদের দাবি যদি বৃহস্পতিবার পূর্ণ দিবস কর্ম ঘণ্টায় থাকতে হয় তাহলে আমাদের শনিবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হোক।

শনিবার সরকারি ছুটির ঘোষণা দাবি করে এক প্রাথমিক শিক্ষক ফেসবুকে লিখেছেন, যত বৈষম্য সব আমাদের এই প্রাথমিক শিক্ষকদের। বেতন বৈষম্য সবচেয়ে তীব্র আমাদের উপরেই। আবার বৃহস্পতিবার অর্ধদিন কর্মঘণ্টা থাকলেও পূর্ণদিন করা হয়েছে। যদি এটা পূর্ণ ঘণ্টাই থাকে তাহলে অপরাপর সরকারি চাকরিজীবীদের মত প্রাথমিক শিক্ষকদেরও শনিবারও ছুটি ঘোষণা করা হোক।

রবিউল ইসলাম নামে প্রাথমিকের এক সহকারি শিক্ষক ফেসবুকে লিখেছে, মন্ত্রণালয় শুধু প্রজ্ঞাপন ধরিয়ে দিতে পারে। এটার বাস্তবতা যে কত কঠিন মফঃস্বলে যেসব শিক্ষক চাকরি করে তারা বোঝে। নদী নালা হাওয়া বাওর ভাঙ্গা রাস্তা মেঠো পথ কত কষ্ট করে বিদ্যালয়ে যে হয়।

রবিউল ইসলাম আরও লেখেন, সরকারে সব দপ্তর রেখে শুধু প্রাথমিকের জন্য ডিজিটাল হাজিরা করা হল। দুর্গম পথ পারি দিয়ে সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে হলে অনেকের সকাল সাতটা বাজে বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা করতে হয়। তিনিও বৃহস্পতিবার পূর্ণ দিবস হওয়ায় শনিবার ছুটির দাবি জানান।

এভাবে প্রায় অর্ধডজন প্রাথমিক শিক্ষক শনিবার সরকারি ছুটির দাবি করেন। এদিকে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি প্রাথমিকের সময়সূচী সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত করার দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েছে। বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবির মত প্রাথমিকের সময়সূচী পরিবর্তনের দাবিতেও আন্দোলনে নামার ঘোষণাও দিয়েছে শিক্ষকরা।