একজন ব্যবসায়ী ও দুটি পোষা প্রাণী (গল্পটি রুপক কিন্তু শিখনীয়)

একগ্রামে একজন কাপড়ের ব্যবসায়ী বাস করতো। তার একটি পোষা গাধা ও একটি বিড়াল ছিলো। মালিক লোকটি প্রতিদিন তার বিড়ালটিকে দুধভাত, মাছের ছোট টুকরো, মাংস এগুলো খাবার দিতো। শোয়ার জন্য নরম বিছানা পেতে দিয়েছিলো। বিড়ালটি খেয়েদেয়ে আরামে ঘুমিয়ে থাকতো।

অপরদিকে, গাধাটিকে সামান্য শুকনো ঘাস,খড়কুটো খাবারের জন্য দিতো। ঘরের সামনে তৈরি একচালার নিচে বেঁধে রাখতো। প্রতিদিন সকাল হলেই, গাধার মালিক কাপড়ের মস্ত বড় এক বোঝা গাধার পিঠে চাপিয়ে দিয়ে, গ্রামের পর গ্রাম ঘুরতো আর কাপড় বিক্রি করতো। অনেক কাপড় বিক্রি করে অনেক টাকা মুনাফা হতো। লোকটি গাধার সাথে চলতে চলতে, নিজেই প্রতি দিন বলতো, বিড়ালটা কোন কাজেরই না।

সারাক্ষণ সে শুধু শুয়ে শুয়ে ঘুমায়, ইঁদুর নতুন কাপড় কেঁটে ফেলছে, তবুও কোন হুশ নেই। তার ব্যবসার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। সারাদিন পর ব্যবসায়ী ও গাধা যখন ফিরে আসতো ঠিক তখনই বিড়ালটা দৌড়ে এসে মালিকের পায়ে এসে শরীর ঘশতো আর মিউমিউ করতো। মালিক তখন বিড়ালকে কোলে করে নিয়ে একবাটি দুধ খেতে দিতো। এভাবেই নিত্যদিন চলছিল। প্রতিদিন বিড়ালের নিন্দা শুনেশুনে গাধাটি ভাবলো, বিড়ালের প্রতি তার মালিকের অনেক রাগ। তাকে কিছু শিক্ষা দিতে হবে। এরপর একদিন, যথারীতি বিড়ালটা যখন মিউমিউ করতে আসলো তখন গাধাটি পা দিয়ে বিড়ালকে একটা লাথি মারলো।

এটি দেখে, গাধার মালিক একহাত দিয়ে গাধার গলার দড়ি ধরে, অন্যহাত দিয়ে এলোপাতাড়ি খুব চাবুক মারতে লাগলো। গাধাটি মনের দুঃখে জোরে দঁড়ি টান দিয়ে মুক্ত হয়ে দৌড়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গেলো। হঠাৎ হেঁচকা টানে লোকটি মাটিতে পড়ে হাত ভেঙে গেলো। ঐ লোকটি এরপর থেকে ছোট একটি কাপড়ের পুটলি মাথায় নিয়ে গ্রামের মধ্যেই বেচাকেনা করতো। তার আয় অনেক কমে গিয়েছিল। আর সকলকে সে বলতো, তার পাঁজী গাধার জন্যই তার এই দুর্দশা। অথচ, ঐ গাধাটি জানেও না তার মালিকের বর্তমান অবস্থা।

কিছু লোক সারাজীবন গাধার মতো খেটেও মিথ্যা অপবাদ মাথায় নিতে হয় আর কিছু লোক বিড়ালের মতো মিউ মিউ করেও কোলে চড়ে থাকে। কিন্তু স্রষ্টা ঠিকই একসময় অবিবেচকদের শাস্তি দিয়ে থাকেন।

 লেখকঃ মোঃ সাইফুল হক খান সাদী

অনার্স, মাস্টার্স সমাজবিজ্ঞান।