বাগানে শোভা পাচ্ছে আম, মাস শেষে উঠবে দেশের বাজারে

 আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঘুরতে বের হলেই চোখে পড়বে সারি সারি আমবাগান। সেখানে শোভাপাচ্ছে থোকা থোকা আম। তবে এ বছর আমচাষিদের বাগান পরিচর্যায় খানিকটা অনীহা থাকলেও আবহাওয়া গত বছরের তুলনায় অনেকটায় অনুকূলে থাকায় আমের উৎপাদন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেই সাথে রাসায়সিক দিয়ে আম পাকানো ঠেকাতে নজরদারির পাশাপাশি আম পাড়ার সময়সীমা না বেঁধে দেওয়ায় আমচাষিরা খুশি।

গত বছর ব্যাপক শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে আমচাষীরা ব্যাপক লোকসানে পড়েন। এ বছর বড় ধরনের ঝড় বা শিলাবৃষ্টি তেমন একটা না হলেও আমবাগানগুলোর দাম নেই বললেই চলে।

শিবগঞ্জের আম ব্যবসায়ী ফজলুল হক জানান, এ বছর বাগানগুলোর ক্রেতা নেই। তাই আমচাষিরা বাড়তি পরিচর্যা করছেন না। সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি আদেশকে কেন্দ্র করে আমচাষিরা রায়টি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান না পাওয়ায় বাগান পরিচর্যায় অনেকটা উদাসীন। তবে, আশার কথা হচ্ছে এ বছর আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনেকটা অনুকূলে থাকায় এবং পরিচর্যা খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় অর্ধেক হওয়ায় লাভের আশা করছেন।

এদিকে বাগানগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, চলতি বছর কীটনাশকের ব্যবহার অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাগানে পাহারা বসানোর জন্য ঘর মেরামতের কাজ চলছে। যেসব গাছগুলোর ডালপালায় অধিক আম এসেছে সেগুলোতে ঠেকা দেয়ার কাজ চলছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের আম ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন শামীম খান জানান, এরকম তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকলে গুটি জাতের কিছু কিছু আম ২৫ মের দিকে উঠে যেতে পারে। নইলে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বাজারে আসবে। 

এদিকে আমের বাজার ও বাগানগুলো মনিটরিং শুরু করেছে প্রশাসন। এবার যেন অপরিপক্ক আম পেড়ে রাসায়নিক দিয়ে না পাকাতে পারে সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষী আ. করিম জানান, গত ২ বছর আম পাড়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় ব্যবসাযীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ বছর যেহেতু প্রশাসনের নজরদারি আছে সেহেতু এ সময়সীমা বেঁধে না দেওয়াই ভালো।

একই সুরে কথা বলেন শিবগঞ্জের সীমান্তবর্তী শাহবাজপুর এলাকার কৃষক মজিবুর রহমান। তিনি জানান, তাপমাত্রা ও আবহাওয়াজনিত কারণে আম অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পেকে যায়। কিন্তু প্রশাসন গত ২ বছর সময় বেঁধে দেওয়ায় আম ব্যাপক হারে পেকে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছিলেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জমির উদ্দিন জানান, আম শিল্পকে বাঁচাতে উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে কোনো পক্ষই যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখবে পর্যবেক্ষণ টিম। এছাড়া কৃষকদের আতঙ্কিত না হয়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী আম ও বাগানের পরিচর্যা করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ জেড এম নুরুল হক জানান, চলতি বছর যেহেতু মহামান্য আদালতের নির্দেশক্রমে ক্ষতিকর রাসায়নিক বাগানে দেয়ার নিষেধাক্কা রয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নজরদারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেহেতু এ বছর আম পাড়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে না। 

আমচাষীদের পক্ষ থেকেও প্রশাসনের এ উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানানো হয়েছে এবং এ নিয়ে আম গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক, কৃষি বিভাগসহ আম সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আম পাড়ার বিষয়ে একটি সভাও করা হয়েছে। সভায় সর্বসম্মতি ক্রমে আম পাড়ার সময়সীমা নির্ধারণ না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

চলতি বছর জেলার ৫ উপজেলায় ৩১ হাজার ৮২০ হেক্টর আমবাগানে প্রায় পৌনে ৩ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শিবগঞ্জ উপজেলায় সর্ব্বোচ প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে।