দুর্ঘটনার আশঙ্কা ,প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে তিনশর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান

মহমারি করোনা ভাইরাসের কারনে টানা দেড় বছর পর খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান।বরিশালের ৬ জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরে এ ধরনের স্কুল ভবন রয়েছে তিনশতাধিকের বেশি। যেকোনো সময় এসব ভবনের ছাদ ধসে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

বেশ কিছু স্কুলের সংস্কার কাজে ব্যস্ত কর্তৃপক্ষ। তবে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে থেকেই সংকীর্ণ ছিল। স্কুল খোলার পরও এসব প্রতিষ্ঠানের ভবন মেরামত-নির্মাণ না হওয়ায় আতঙ্কের মুখে পড়েছেন শিক্ষার্থীদের বাবা-মা।

চলতি বছর ৭ এপ্রিল পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া এ হাকিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে অফিস সহকারী মিরন মিয়া আহত হন। এদিন এসএসসির ফরম পূরণের কার্যক্রম করছিলেন তিনি। স্কুল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে ওই বিদ্যালয়ে ছয় কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানোর কথা বলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহতাব হোসাইন। উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার অনাদি কুমার বাহাদুর এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশলের পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে শ্রেণিকক্ষ সংকটে দশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ, ঝূকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার পর থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা ধসে পড়ায় ব্যবহার অযোগ্য ভবনে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 

হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলেই স্কুলগুলোতে শিশুদের উৎকন্ঠা বেড়ে যায়। ছাদের ও দেয়ালের পলেস্তারা ধসে পড়ছে। দরজা-জানালার গ্রিল খসে পড়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরিবেশ নেই।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শুধু মাত্র বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলাতেই ২৯টি স্কুল ভবন ঝুকিপূর্ণ। গত বছর তারা ঝুঁকিপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা জেলা কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন।

স্কুলগুলো হলো- উত্তর পশ্চিম রাকুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাদিবাসকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাবুগঞ্জ সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্ষুদ্রকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চন্দ্রপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরজি কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মানিককাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর রফিয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর রাকুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বায়লাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, করমুল্লাকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আগরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংহেরকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দরিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহিষাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খানপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওলানকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ভূতেরদিয়া জনপ্রিয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইদিলকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর ক্ষুদ্রকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রফিয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব চাঁদপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য বকশিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বায়লাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য কিসমত চাঁদপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চাঁদপাশা কিসমত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। 

একইভাবে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ১৫ টি স্কুল ঝুঁকিপূর্ণ। এ স্কুলগুলো মেরামত ও নির্মাণের জন্য উপজেলা থেকে তালিকা জেলা অফিসে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া আগৈলঝাড়া উপজেলা থেকে ১৩ স্কুলের তালিকাও পাঠানো হয়েছে। 

জানা গেছে, উপজেলার ইউনিয়নের গৈলা  ২নং দক্ষিণ শিহিপাশা (দাসেরহাট) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৪০ সালে তিন কক্ষের টিনশেড বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। পরে দুটি কক্ষে টিন ও একটি কক্ষে ছাদ ঢালাই হলেও বর্তমানে টিনগুলো মরিচা পড়ে প্রায় শেষ। ছাদও ভেঙে গেছে। এ ছাড়া উত্তর শিহিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুর্ব সুজনকাঠি, সেরাল, পূর্বসুজনকাঠি আইডিয়াল, পশ্চিম সুজনকাঠি, নাঘিরপাড়, দাসপট্টি, রাংতা, পূর্ব আস্কর, বাগধা, পয়সা, পশ্চিম আমবৌলা, ফেনাবাড়ি, চক্রবাড়ি ও তালতারমাঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। 

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের দাওকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান শাহিন বলেন, ‘করোনার কারণে পাঠ বন্ধ থাকলেও বাকি সব কিছুই চালু ছিল। যার কারণে কম বেশি সব স্কুলেই উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। এমনকি স্লিপ ফান্ড থেকে স্কুল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশনা ছিল। পাশাপাশি শিশুরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে যেন স্কুলে প্রবেশ করতে পারে সেই বিষয়ে কাজ করার নির্দেশনা ছিল সরকারের পক্ষ থেকে। বিশেষ করে শিশুদের হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনো যে সব স্কুলের ঝুকিঁপূণ রয়েছে তা অচিরেই মেরামত ও সংস্কার করা হবে।’

 বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলের সন্ধান পেলেই, আমরা দ্রুত সংস্কার বা নির্মাণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। সেক্ষেত্রে আামাদের ঝুকিপূর্ণ স্কুলের সংখ্যা খুবই কম।’

বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের  বিভিন্ন উপজেলা থেকে ২০টি স্কুল মেরামত ও নির্মাণের চিঠি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাকেরগঞ্জ ও মুলাদীতে ৪টি করে মোট আটটি। বাকি উপজেলায় ঝুকিঁপূর্ণ স্কুলের সংখ্যা খুবই কম। 

এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘উপজেলা থেকে তালিকা পাওয়ার পরই আমরা সংস্কার ও নির্মাণ কাজে হাত দেই। আগে যে আবেদনগুলো এসেছিল তা মেরামত করা হয়েছে। এখন যে কয়টি বাকি রয়েছে তা টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংস্কার ও নির্মাণ করা হবে।’

শুধু বরিশাল জেলাই নয় এমন ঝুকিপূর্ণ স্কুল রয়েছে বিভাগের প্রায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায়। এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা জামাল উদ্দীন খান বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনের তথ্য নিয়ে সেগুলোর সংস্কার ও নির্মাণ করানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি বছর প্রতিটি স্কুলকে স্লিপ প্রোগ্রামের আওয়তায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দেয়া হয়। যা দিয়ে স্কুলগুলো ছোটখাটো মেরামত ও সংস্কার কাজ করতে পারে। আর বড় কাজের জন্য ১ লাখ থেকে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তাই ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলের সংখ্যা অনেকটা কমে গেছে।